এক সুন্দর বাগানে থাকত অনেক কীটপতঙ্গ। তার মধ্যে ছিল একটা ঝিঁঝিঁপোকা। তার ডাক ছিল ভয়ংকর কর্কশ, ঠিক যেন রাক্ষসের আওয়াজ। অন্য পোকারা তাকে দেখলেই নিন্দা শুরু করে দিত। কিন্তু ঝিঁঝিঁপোকা তাদের কিছু বলত না। শুধু তার বাড়ি, মানে লিলি ফুলের পাপড়িতে বসে কান্নাকাটি করত। একদিন এক মৌমাছি এক গঙ্গাফড়িং-এর বাড়ি থেকে ফিরছিল। সে ঝিঁঝিঁপোকাকে দেখে বলল, “ঝিঁঝিঁভাই, কাল একটা গানের প্রতিযোগিতা আছে। অনেক পোকারা আসবে, আমিও যাব। তুমিও এসো। এখন আমি যাই, প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হতে হবে।”
ঝিঁঝিঁ তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ভাবল, আমি গান করব কী করে। সে তবুও ভাবল, ঠিক আছে, কাল দেখা যাবে।
পরের দিন ঝিঁঝিঁপোকা গেল প্রতিযোগিতা মঞ্চে। সেখানে সবাই খুব সুন্দর করে মন দিয়ে গান করল। ঝিঁঝিঁপোকা সবার গান হাঁ করে শুনছিল। এবার ঝিঁঝিপোকার পালা। সে ভয়ে কাঁপছে। তবুও সাহস করে মঞ্চে উঠে গান ধরল, ‘ঝিঁ… ঝিঁ… ঝিঁ…’
তার কর্কশ গলার গান শুনে সবাই তাকে বেসুরো বলে অপমান করতে লাগল। ঝিঁঝিঁ খুবই দুঃখ পেল। সে দেখল মৌমাছি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। মাকড়শা দ্বিতীয় ও বোলতা তৃতীয়। ঝিঁঝিঁপোকা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে এল। সে বলল, “আমি আর এই ফুলের বাগানে থাকব না। আমি অন্য বাগানে চলে যাব।”
সে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে চলল অন্য বাগানে। হঠাৎ দম-দম-দমাস শব্দ। কিছু ছোটো ছেলেমেয়ে বাগানে প্রজাপতি ধরতে এসেছে। ভয়ে সব প্রজাপতি সেখান থেকে পালাচ্ছে, কিন্তু একটা ছোট্ট প্রজাপতি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়েরা ছোট্ট প্রজাপতিটিকে দেখতে পেয়ে বলল, “ওই তো, ওই তো প্রজাপতি। চল ধরি।”
সবাই প্রজাপতিটাকে ধরতে গেল। সে, “বাঁচাও, বাঁচাও আমাকে!” বলে চিৎকার করল। কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাল না। কারণ ধরা পড়তে কেউ চায় না।
ঝিঁঝিঁপোকা ভাবল, আমাকেই কিছু একটা করতে হবে। সে জোরে জোরে কর্কশ সুরে ডাকতে লাগল, ‘ঝিঁ… ঝিঁ… ঝিঁ…’ সব ছেলেমেয়েরা ভয়ে, ‘ওরে বাবা গো, মা গো, এ কীসের শব্দ!’ বলে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।
প্রজাপতি বলল, “অনেক ধন্যবাদ ঝিঁঝিঁভাই, তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ।”
তখন সব পোকারা তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলল, “ক্ষমা করে দাও ঝিঁঝিঁভাই, আমাদের অন্যায় হয়েছে। তুমি গান ভালো করো না, এটা ঠিক, কিন্তু তুমি খুবই সাহসী। আমাদের ছেড়ে যেও না প্লিজ।”
ঝিঁঝিঁপোকা আর গেল না। সকলের সঙ্গে সেই ফুলের বাগানেই আনন্দে দিন কাটাতে লাগল।