লিখিব খেলিব আঁকিব সুখে-গল্প রতনের পুতুল- স্বয়মজ্যোতি সাউ- শীত ২০২০

চাঁদপুর গ্রামে এখন বেশ জাঁকজমক করেই মেলা বসে। সেই মেলা দেখতে গেছে রতন।

সঙ্গে কে গেছেন? তার মামা। মা মারা গেছেন। বাবার প্রচুর কাজ। বাবাকেই রান্নাবান্না করতে হয়। তার সঙ্গে আবার কাজে যাওয়া। রতনকে দেখবে কে? একসঙ্গে অত কাজ করতে না পারায়, রতনের বাবা রতনকে তার মামা-মামির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা তাকে খুব ভালোবাসেন।

মেলায় রতন যা চাইছে, মামা তাকে তাই কিনে দিচ্ছেন। হঠাৎ রতনের চোখ গেল একটা খুব সুন্দর পুতুলের ওপরে। সেটা এক বুড়ো দোকানদার বিক্রি করছেন। মামার কাছে পুতুল কেনার বায়না ধরল রতন। আগেই বলেছি, রতন যাই চাইছে, মামা তাকে তাই কিনে দিচ্ছেন। এবারেও তাই হল। পুতুলটি কিনে দিলেন মামা।

পুতুল পেয়ে তো রতন খুব খুশি। মাটির পুতুল, লম্বা চুল, পায়ে নূপুর, চোখদুটো দেখলে মনে হয় যেন কোনো মানুষ তাকিয়ে আছে। সেদিন রাতে রতনের চোখে আর ঘুম আসে না। মাটির পুতুল নিয়ে শুধু খেলেই যায়।

রাত বারোটা বাজল, শব্দ হল ঢং, ঢং, ঢং। রতনের কোনো হেলদোল নেই, সে শুধু বলে, “আহা পুতুল, তোমার চোখদুটো কী সুন্দর! পায়ের নূপুর কোন স্যাকরা গড়ে দিল গো? কোথায় থাকতে তুমি, কোথায় তোমার বাড়ি? ওখানে আমায় নিয়ে যাবে গো? আচ্ছা, বলো তো তোমার নাম কী রাখি? হ্যাঁ, বকুল। তোমার নাম আজ থেকে হল বকুল। কী পুতুল, কেমন নাম? বলো তুমি।”

ও মা, এ কী কাণ্ড! পুতুল হঠাৎ মানুষের গলায় বলে উঠল, “খুব সুন্দর নাম রতন।”

রতন খুব ভয় পেয়ে গেল। আরো বলল পুতুল, “আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু হলাম, তোমার সঙ্গে ছাড়া আমি আর কারো সঙ্গে কথা বলব না।”

এবার রতনের মনে কিছুটা সাহস জুটল। সে কোনোরকমে ঢোঁক গিলে বলল, “আ-আ-আচ্ছা।”

সেদিন থেকেই দুজন খুব বন্ধু। রতন একা থাকলেই পুতুল রতনের সঙ্গে গল্প করে। রতন পুতুলকে বলে তার মায়ের কথা, যে মা এখন দূর আকাশের তারা।

একদিন সকালে উঠে রতন দেখে, এক জটা আর দাড়িওলা বুড়ো মানুষ তাদের বাড়ির দিকে আসছেন। আরে, আরে, এ যে এক সাধুবাবা! রতন তাঁকে প্রণাম করে ঘটিভর্তি জল দিয়ে তাঁর পা ধুইয়ে দিল।

সাধু বাবা বললেন, “ব্যম ভোলে, তোর কল্যাণ হোক। তা তোর পিতা কোথায়?”

রতন বলল, “সাধুবাবা, আমার পিতা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, কিন্তু আমার মামা আছেন।” এই বলেই সে ডাকল, “মামা, ও মামা, দেখো আমাদের বাড়িতে কার পায়ের ধুলো পড়ল!”

মামা গেছিলেন পুকুরে নাইতে। ডাক শুনে তিনি পড়ি কি মরি করে ছুটে এলেন। দেখলেন এক সাধুবাবা সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তখনই তাঁর পায়ে প্রণাম করলেন মামা।

সাধুবাবা তাঁকে আশীর্বাদ করলেন। তারপর বললেন, “তোমাদের ভক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট। তোমরা কী চাও বলো।”

মামা বললেন, “বাবা, আশীর্বাদ করুন আমাদের যেন কখনো কোনো অভাব না থাকে।”

সাধুবাবা বললেন, “তথাস্তু।”

এবার রতনের পালা। সে বলল, “আমার আর পুতুলের যেন কোনোদিন ছাড়াছাড়ি না হয় সাধুবাবা।”

এতেও সেই একই উত্তর দিলেন সাধুবাবা, “তথাস্তু।”

সাধুবাবা চলে যাওয়ার পর সেদিন রাতে শুতে গেল রতন আর তার মামা। আগের সব দিনের মতোই রতন তার কোলের পাশটিতে শুইয়ে দিল তার বকুলকে। ওমা! পরদিন সকালে রতন উঠে দেখে তার পাশে একটি ফুটফুটে মেয়ে শুয়ে আছে। রতন অবাক হয়ে চেয়ে আছে দেখে মেয়েটি বলে উঠল, “আমি তোমার বকুল গো।”

ঠিক, এ তো সেই তার মাটির পুতুলেরই গলা। রতন বুঝল, এ নিশ্চয়ই সাধুবাবার আশীর্বাদেরই ফল। রতন তো খুব খুশি। সাধুবাবার আশীর্বাদে সেখানে কোনো অভাব নেই আর, শুধুই সুখ আর সুখ। সে যে কী আনন্দের জায়গা, সেখানে থাকলে বুঝতে পারতে।

শিল্পী: অভিরাজ

খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s