Toyঢাক-গল্প রীতার ভয়- স্বয়মজ্যোতি সাউ- বর্ষা ২০২১

likhiboswayamjyoti

আজকে খেতে খেতে ভূতের গল্প হয়েছে মা,বাবা, ঠাম্মি আর দাদুর সঙ্গে। দাদু বলেছেন, “ভূত গ্রাম্য শ্মশানে রাতে ঘুরে বেড়ায়। সেই সময় কোনও মানুষ সেখানে গেলে,ভূত তার ঘাড়ে চাপে। বুঝলে দাদুভাই?”

মা-বাবা বলেছেন, “ওগুলো বিশ্বাস করবে না রীতা, ওসব গল্প। ভূত বলে কিছু হয় না।”

“কে কবে তার বাচ্চাকে ভয় দেখানোর জন্য ওই ভূত শব্দটা আবিষ্কার করেছিল।”

সেই থেকে রীতার মনে প্রশ্ন জাগল, ভূত কি সত্যিই আছে?

সে যে এতো গল্প পড়ে, সেখানে বেশির ভাগই তো ভূতের গল্প। দাদু বলেছেন, ভূত নাকি শ্মশানে থাকে। শ্মশানের দিক থেকে আসলে প্রথম বাড়িটাই তো তাদের, ভূত যদি এখানে আসে, কী হবে?

সেই থেকে রীতা খুব ভয়ে ভয়ে থাকে। অন্ধকার জায়গায় যেতে চায় না।

একদিন হলো কী, তার মা তাকে বললেন, “সোনা, ওই ঘরে গিয়ে আমার কাঁকনটা নিয়ে আয় তো, আমার সোনা মা।”

দুর্ভাগ্যবশত সেই ঘরটা ছিল অন্ধকার, আর আলোর সুইচ ছিল জানলার পাশে। হঠাৎ জানলার বাইরের ঝুপসি লিচু গাছটা এমন নড়ল যেনো কেউ তাকে জাপটে ধরবে বলে দৌড়ে আসছে। তার তো ভয়ে একেবারে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। সেই ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল রীতা। মা কৌতুহলভরা গলায় প্রশ্ন করলেন “কী হয়েছে রে মা, তুই এভাবে ছুটে চলে এলি কেন?  আর আমার কাঁকনটাও অনিসনি দেখছি! কী হয়েছে বল আমাকে।” 

রীতা ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ভূ ভূ ভূ… ভূত।”

“কোথায় ভূত, সোনা, কোথায়?”

রীতা ভয়ার্ত গলায় বলল, ” লিচুগাছের তলায় সাদা কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছে,আমাকে জাপটে ধরবে বলে দৌড়ে আসছিল।”

মা হো হো করে কিছুক্ষণ হেসে বললেন, “হুমমম এ তো দেখছি ভারী চিন্তার ব্যাপার! আমার মিষ্টি মেয়েটাকে শেষে ভূতে ধরতে আসছে! হায়, হায়, রাম,রাম,রাম, হাহাহাহা,,,,”

এত কথা শুনে টিভির ঘর থেকে রীতার বাবা সেখানে উপস্থিত হয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, “কী হলো রীতা, শুনতে পেলাম তুমি নাকি ভূতের দেখা পেয়েছ?  তা কোথায় সেই ভূত, আমি কি তার দর্শন পেতে পারি?”

“নিশ্চই বাবা, চলো চলো…” 

ঘরে গিয়ে রীতা লিচু গাছটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “ওই যে বাবা, লিচুগাছের তলায় সাদা কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছে”

বাবা সেখানে টর্চের আলো ফেলেই হা হা করে হেসে উঠলেন, “আরে কোথায় ভূত! এ তো কয়েকটা বস্তা!”

দেখে রীতা খুব লজ্জা পেল।

রীতার মা বলে উঠলেন, “ও হো, তোমাকে বলতেই ভুলে গেছিলাম, দুপুরে তোমরা যখন ঘুমোচ্ছিলে, তখন মিস্ত্রীরা সিমেন্টের বস্তা রেখে গিয়েছিল দোতলার কাজের জন্য।”

এবার রীতা বুঝলো ভূত বলে সত্যিই কিছু হয় না। সেদিনের পর থেকেই রীতা আর ভূতের ভয় পায় না।

কী আনন্দ!

(লিচুগাছের মগডালে যে ভূতপেত্নীদের ইশকুল চলে তাতে এক খুদি পেত্নী তার বন্ধুদের ওপরের গল্পটা বলছিল। তখন ডাকিনী মিস সেটা শুনে ভীষণ রেগে খুদি পেত্নীর পিঠে কামড়ে দিয়ে বলল, “দুষ্টু মেয়ে, কতদিন বলেছি মানুষ বলে কিছু হয় না। ওসব কুসংস্কার। সেদিনের পরে খুদি পেত্নী আর মানুষে বিশ্বাস করে না।– সম্পাদক)

খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি

3 thoughts on “Toyঢাক-গল্প রীতার ভয়- স্বয়মজ্যোতি সাউ- বর্ষা ২০২১

    1. খুব ভালো হয়েছে। এই রকম আরও সুন্দর সুন্দর গল্প লিখতে থাকো।
      তুমি ঠিক লিখেছ, ভূত বলে কিছুই নেই।

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s