TOYঢাক- ঝুমের গোয়েন্দাগিরি-অস্মিতা পৈতণ্ডী-শীত ২০২১

toydhakJhumer Goyendagiri- New illustration- Asmita Paitandi

একটা মেয়ে ছিল, তার নাম ঝুমঝুমি। সবাই ওকে ঝুম বলে ডাকত। একদিন ওর বন্ধু রিমার ফোন এল। রিমা বলল, “ঝুম, কাল আমার জন্মদিন। তুই কাল আমাদের বাড়িতে চলে আয়।”

ঝুম বলল, “নিশ্চয়ই যাব।”

পরদিন ঝুম রিমার বাড়ি যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ল। রিমার বাড়ি খুব কাছেই। ঝুম হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে গেল সেখানে। গিয়ে দেখল তখনও অন্য বন্ধুরা কেউ আসেনি।

ঝুমকে বসিয়ে রিমার মা ভেতরের ঘরে চলে গেল রিমাকে ডাকতে। ঠিক তখনই ডোর বেলের টিং-টং আওয়াজ হল। রিমার মা আবার ফিরে এসে দরজা খুলতেই ঝুম দেখল সব বন্ধুরা এসে গেছে।

সবাই রিমার মাকে জিজ্ঞেস করল, “রিমা কোথায়?”

রিমার মা বলল, “ও তো নিজের ঘরে সাজতে ব্যস্ত।”

তখনই রিমা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল, “এই তো এসে গেছি।”

রিমার সব বন্ধুরা তখন রিমাকে ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে অনেক অনেক গিফট দিল। তারপর শুরু হল বার্থডে পার্টি। কেক কাটা হল। অনেক খাওয়াদাওয়াও হল। পার্টি শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেছিল। তাই রিমার মা বলল, “আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। আজকের দিনটা তোমরা এখানেই থেকে যাও। কাল সকালে বাড়ি চলে যাবে। আমি তোমাদের বাড়িতে ফোন করে বলে দিচ্ছি যে তোমরা এখানে থাকবে। আমাদের বাড়িতে অনেক ঘর আছে। তোমরা যে যার মতো ঘর বেছে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

সবাই পছন্দমতো ঘর বেছে নিয়ে শুয়ে পড়ল। ঝুমও একটা ঘরে গেল। কিন্তু রিমা ঝুমকে ওই ঘরে যেতে দেখে বলল, “ঝুম, এই ঘরটায় থাকিস না। এই ঘরটায় ভূত আছে। সারাক্ষণ টুং টুং করে শব্দ হয়। তুই আমার ঘরে শুবি চল।”

ঝুম হাসতে হাসতে বলল, “আমি মোটেও ভূতে বিশ্বাস করি না। ভূত বলে কিছু হয় না। আমি এই ঘরেই শোব। দেখি কেমন ভূত আছে এখানে।”

সেদিন রাতে ঝুম জোর করেই ওই ঘরটায় শুল। সবে একটু একটু ঘুম এসেছে, ঠিক তখনই টুং-টুং শব্দ হতে লাগল। ঝুম তাড়াতাড়ি উঠে ঘরের আলো জ্বালাল। শব্দটা তখনও হচ্ছে। ঝুম চারদিক দেখতে দেখতে যেই খাটের নীচে দেখতে গেল, দেখল ওখানে একটা টিনের বাক্স রাখা। বাক্সটা নড়ছে। শব্দটাও ওখান থেকেই আসছে।

ঝুম বাক্সের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে বলল, “আচ্ছা! এই সেই ভূত!”

তখনই ঘরের বাইরে কার যেন পায়ের শব্দ হল। ঝুম ওর ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখল, অন্ধকার করিডর দিয়ে একটা মেয়ে কোমর অবধি লম্বা চুল দুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ঝুম একটু ভয় পেল। ভাবল, এটা ভূত নয় তো? তারপর মনে মনে ভাবল, ভূত বলে তো কিছু হয় না। ভেবেই ঝুম দরজা খুলে পা টিপে টিপে পিছু নিল মেয়েটার। দেখল, মেয়েটা ড্রইং রুমের দিকে যাচ্ছে। ঝুমও পা টিপে টিপে গেল। তারপর মেয়েটা হঠাৎ করেই ঝুমের দিকে মুখ ফেরাল। ঝুম দেখতে পেল ও কোনও ভূত নয়। ও তো রিমা। চোখ বুজে বুজে হেঁটে চলেছে। ঝুম বুঝতে পারল যে রিমা স্লিপ ওয়াকিং করছে। তারপর রিমা ওইভাবেই হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ঝুমও তখন নিজের ঘরে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ল।

সকাল হয়েছে। ঝুম তাড়াতাড়ি উঠে রিমার ঘরের দরজায় নক করল। রিমা দরজা খুলতেই ঝুম বলল, “আমি তোদের ভূতকে ধরে ফেলেছি।”

রিমা বলল, “তাই নাকি?”

ঝুম বলল, “হ্যাঁ। তোর মা-বাবা আর বন্ধুদের সবাইকে ড্রইং রুমে বসা। ওখানেই সব বলব।”

রিমা সবাইকে ড্রইং রুমে বসাল। ঝুম সেখানে এসে বলল, “আচ্ছা রিমা, যে-ঘরে রাতেরবেলা আওয়াজ হয়, সেই ঘরের জানালাটা কি সবসময় খোলা থাকে?”

রিমা বলল, “মাঝে মাঝে তো থাকেই।”

ঝুম বলল, “ওই জানলাটা দিয়ে রোজ রাতে একটা হুলো বেড়াল আসে। বেড়ালটা খাটের নীচে রাখা টিনের বাক্সের ভেতরে ঢুকে ঘুমোয়। টুং-টুং আওয়াজ ওখান থেকেই আসে।”

তখন অন্য এক বন্ধু বলল, “কিন্তু কাল রাতে আমি একটা শব্দ পাচ্ছিলাম। ড্রইং রুমের দিক থেকে।”

ঝুম বলল, “হ্যাঁ। ওই শব্দটা রিমা করছিল।”

রিমা বলল, “আমি? কখন?”

ঝুম বলল, “রিমা, তুই টের পাসনি, কারণ তুই স্লিপ ওয়াকিং করছিলি।”

রিমা বলল, “কাল একটা তো স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে আমি পার্কে হাঁটছি। সত্যি সত্যিই হাঁটছিলাম? স্লিপ ওয়াকিং করছিলাম? তার মানে সত্যিই ভূত নেই?”

রিমার মা-বাবা ঝুমকে খুব আদর করে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ঝুম। তুমি না এলে আমরা তো এসব জানতেই পারতাম না।”

তারপর রিমার সব বন্ধুরা ব্রেকফাস্ট করে নিজের নিজের বাড়ি চলে গেল।

রাতে রিমা বাড়ির সব জানালা বন্ধ করে দিল। সত্যিই তাই। সেদিন রাতে আর কোনও আওয়াজ হয়নি।

অলঙ্করণ- অস্মিতা পৈতণ্ডী

খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s