গল্প লেখার কর্মশালা–নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়-দঃ ২৪ পরগ্ণা
নারায়ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী অভিজিত দাশগুপ্তের আয়োজনে সে স্কুলের খুদেদের নিয়ে একটা গল্প গড়ার কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। সে আসরে শ্রী ত্রিদিব চ্যাটার্জি, শ্রী সৈকত মুখোপাধ্যায়, শ্রী জয়দীপ চক্রবর্তী ও শ্রী দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য তাদের দিয়েছিলেন নানান গল্পের সুতো, আর সেই সুতো থেকে আশ্চর্য সব গল্প বুনেছিল স্কুলের খুদেরা। তাদের থেকে বাছাই কয়েকটা গল্প এই সংখ্যার জয়ঢাকে প্রকাশিত হল।
হরিমতি খুবই গরিব। খুব কষ্ট করে সে তার সংসার চালাত। বলতে গেলে দুধ বিক্রি করেই সে তার অভাব মেটাত। সে রোজ দুধ নিয়ে হরিতকী গ্রামে যেত বিক্রি করার জন্য হরু ডাকাতের জঙ্গল পার হয়ে। সে খুব আতঙ্কের সঙ্গে ওই রাস্তা দিয়ে যেত ডাকাতের ভয়ে। সেরকমই একদিন সে দুধ নিয়ে সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। মৃদু বাতাস ফুরফুর করে বইছে, সঙ্গে সূর্যের ছেঁড়া ছেঁড়া আলো, চারদিক নিস্তব্ধ। সে একা যাচ্ছিল। হঠাৎ তার পথ আটকে দাঁড়াল এক ভূত। রোগা লিকলিকে শরীর তার। হরিমতি তো ভয়ে একেবারে জড়সড় হয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। মুখে কোনও কথা নেই। চোখ দুটো অপলক হয়ে আছে। পুরো প্রাণটা বেরিয়ে যায় যায় অবস্থা। এমন সময় ভূতটা তার কাছে এগিয়ে আসতে থাকল। ভূতটা তার কাছে এসে তার চারদিকে ঘুরতে লাগল। তারপর সে হরিমতিকে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে তোমার ভয় লাগছে?”
হরিমতি তো একেবারে ভয়ে কাতর। সে ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ, ভীষণ।” হরিমতি ভূতটাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে? কেন আমার রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছ?”
ভূতটা বলল, “আমি একটা ভূত। একটা সময় আমি এই গ্রামেই বাস করতাম। আমাকে কেউ পছন্দ করত না জানো!”
হরিমতি বলল, “কেন? তোমাকে কেউ পছন্দ করত না?”
ভূতটা বলল, “আমি জানি না। তবে আমাকে কেউ ভালোবাসত না। আমার কোনও বন্ধু ছিল না জানো! তাই একদিন আমি মনের দুঃখে এই জঙ্গল দিয়ে যাচ্ছিলাম বাড়ি ছেড়ে। হঠাৎ দেখি জঙ্গলের মধ্যে ডাকাত। আমি তো ভয়ে ভয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাকে ওরা দেখে ফেলে আর আমি ওদের সব কথা শুনে নেওয়ার জন্য আমাকে ওরা মেরে ফেলে। সেই থেকেই আমি ভূত হয়ে এই গাছে, এই জঙ্গলেই থাকি।”
হরিমতি বলল, “ও। কিন্তু তুমি আমার পথ কেন আটকে দাঁড়ালে?”
ভূতটা বলল, “আমার কোনও বন্ধু নেই। তুমি আমার বন্ধু হবে?”
হরিমতি বলল, “বন্ধু? কিন্তু তুমি তো ভূত। তোমাকে দেখলেই আমার ভয় করবে। আমি কীভাবে তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করব?”
ভূতটা বলল, “তোমার কোনও ভয় নেই। আমি তোমার কোনও ক্ষতি করব না। শুধু তুমি আমার বন্ধু হয়ে যাও।”
হরিমতি অনেক ভেবেচিন্তে বলল, “ঠিক আছে, তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু হলাম।”
ভূতটা তো আনন্দে আত্মহারা। তার প্রথম বন্ধু। যাকে কেউ ভালোবাসত না, তার বন্ধু হয়েছে। এই ভেবে সে খুব খুশি হয় এবং হরিমতিকে একটা উপহার দেয় একটা মাটির হাঁড়ি।
হরিমতি বলে, “হাঁড়ি? হাঁড়ি নিয়ে আমি কী করব বন্ধু?”
ভূতটা বলল, “এটা কোনও সাধারণ হাঁড়ি নয় বন্ধু। এটা জাদু হাঁড়ি।”
হরিমতি অবাক হয়ে বলল, “জাদু হাঁড়ি! কিন্তু এটা নিয়ে আমি কী করব?”
ভূতটা বলল, “এর থেকে তুমি যা চাইবে তাই পাবে বন্ধু। তোমার যা ইচ্ছে তাই চাও, এই হাঁড়ি তোমায় তা দেবে।”
হরিমতি বলল, “ঠিক আছে বন্ধু।”
বলে সে একটা দুধের গোরু চাইল এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা গোরু তার সামনে হাজির হল।
হরিমতি তো খুব খুশি। কারণ, তার দুটো গোরু হল। এবার সে আরও বেশি করে দুধ বিক্রি করতে পারবে এবং তার অভাব দূর হবে। হরিমতি ভূতটাকে বলল, “ধন্যবাদ বন্ধু তোমার এই উপহারের জন্য।”
এই বলে হরিমতি তার উপহার নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল এবং সুখে দিন কাটাতে লাগল কোনও অভাব ছাড়াই। তার যখন যা প্রয়োজন হত সে সেই জাদু হাঁড়ির কাছ থেকে তা চেয়ে নিত। এইভাবে তার জীবন চলতে লাগল এবং সেই ভূতটার সঙ্গেও মাঝে মাঝে দেখা করতে যেত। এভাবেই চলতে থাকে পুরোটা।