Toyঢাক-গল্প-দেশের নাম সন্দেশ-সুশ্বেতা সরকার, তৃতীয় শ্রেণি-বসন্ত২০২৩

toyshaksandesh

পুঁটি আর আমি বসে আছি। আমি রকিং চেয়ারে আর পুঁটি আমার কোলে। পুঁটি আমার মামাতো বোন। ওর বয়েস এখন বছর তিনেক। আমরা দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলাম পহেলা বৈশাখের কয়েকদিন আগে। ট্রেন থেকে নেমেছি ভোর পাঁচটায়। ওখান থেকে আর বাড়ি ফিরিনি, মামার বাড়িতে গাজন হয় বলে সটান এখানে চলে এসেছি। গল্প করতে করতে আর ঘুম হয়নি। তাই এখন ঘুম পাচ্ছে। পুঁটি দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়েছে।

হঠাৎ দেখি একটা চুণিপান্নার কারুকার্য করা সোনার দরজা। ভেতরটা সাদা মেঘ! আমি পুঁটিকে কোলে নিয়েই দরজার ভিতরে গিয়ে দেখি সেখানে রসমালাইয়ের নদী, গাছে ফল ফুলের জায়গায় গোলাপ জামুন আর পাতার জায়গায় বরফি সন্দেশ! এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের চেয়ে একটু ছোট সাইজের ক্ষীরের পুতুল। ওদের হাতে একটা দড়ি।

যাতে ওরা আমাদের চিনতে না পারে তাই আমার আর পুঁটির জামা খুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হল। ওরা ভাবল পুঁটি ওদের রাজকন্যা আর আমি ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আসলে আগের দিন রাত্রে রাজকুমারী সিনেমা দেখছিল, তাই ঘুমোতে দেরি হয়ে গেছিল তাই উঠতেও দেরি হয়ে গিয়েছিল আর তাই প্রাতঃভ্রমণে বেরোতেও দেরি হয়েছিল। সেই জন্য ফিরতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু রাজামশাই ভেবে বসলেন তার মেয়ে চুরি হয়ে গেছে। তিনি কিডন্যাপারকে বাঁধার জন্য কয়েকটা দড়িসহ ক্ষীর সৈন্য পাঠিয়েছেন। ওরা আমাকে বেঁধে নিয়ে গেল ওদের রাজার কাছে। ওদের রাজার আবার মুন্ডুটা মিহিদানার লাড্ডুর আর গা’টা সীতাভোগের। যেহেতু রানিমা ক্ষীরের পুতুল তাই তার মেয়েও ক্ষীরের পুতুল। রাজা আদেশ দিলেন “সন্দেশের রাজা অপরাধীকে দন্ড দেয়নি এমন কখনো হয়নি। তাই এও শাস্তি পাবে। একে জলে ডুবিয়ে মারা হোক।”

আদেশ দিতে না দিতেই ক্ষীর সেনারা আমায় জলের মধ্যে ডুবিয়ে দিল। অসুবিধা হল না কারণ এই ভরপুর গরমে জলে ডুবে থাকতে বেশ মজাই লাগছিল। চোখে জল ঢুকে জ্বালা করবে বলে চোখ খুলছিলাম না কিন্তু হঠাৎ মনে হল মরে তো যাবই শুধু শুধু চোখ না খুলে কী লাভ! চোখ খুলে দেখি সবাই খুব সাজুগুজু করে দাঁড়িয়ে। মা আমার পিছনে মগ হাতে দাঁড়িয়ে। তার পাশে পুঁটি দাঁড়িয়ে একটা সুন্দর লাল গাউন পরে। সে বলল “রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে আমরা ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে উঠে দেখি সবাই গাজনের মেলায় যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই আমিও মায়ের কাছে গিয়ে রেডি হয়ে নিলাম। পিসি তোমাকে অনেক ওঠাল তবুও তুমি যখন উঠলে না তখন একমগ জল নিয়ে মুখে ঢেলে দিল।”

 যখন মেলায় নাগর দোলায় চাপলাম তখন আমি আর পুঁটি পাশাপাশি বসেছিলাম। আমি আমার স্বপ্নের কথা বলতে পুঁটি বলল ” এমা!” আমি বললাম “এতে অবাক হওয়ার কী আছে?” পুঁটি বলল “আমিও এই একই স্বপ্ন দেখেছি পুরো উল্টোভাবে, মানে আমার জায়গায় তুমি আর তোমার জায়গায় আমি।” আমরা আর এই কথা পাঁচকান করিনি পাছে লোকে আমাদের পাগল ভাবে।

খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s