এই লেখকের আগের গল্প- দোসর, গল্পদাদুর আসর, পালোয়ান
সেদিন সন্ধেবেলা হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘ ঘনিয়ে এল। এমন ঘনঘোর হয়ে মেঘ জমল যেন নিমেষে বিকেলের আলো ফুরিয়ে সন্ধে হয়ে গেল। তিতাস আর তার বন্ধুদের খেলাধুলা সব পণ্ড হয়ে গেল। তার থেকেও বেশি কষ্ট হল তাদের এই ভেবে যে, আজ বুঝি দাদুর গল্পের আসরটাও মাটি হল। কারণ, এই তো সবে খেলতে শুরু করেছিল তারা, এর মধ্যেই খেলা থামাতে হল! এর অর্থই হল তাদের আজ খেলা না করা। আর খেলা না করলে দাদুর আসরে গল্প শোনা বন্ধ। ইস্, কোনও মানে হয়?
তিতাসের ঠাকুরদা, মানে ওদের গল্পদাদু শিশিরবাবু কিন্তু ঠিক সময়ে এসেছিলেন। ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস আগেই পেয়ে তিনি তাঁর আসরের যথোচিত ব্যবস্থা করছিলেন। সোসাইটির গেটের পাশে, যেখানটায় পাঁচিলটা গঙ্গার দিকে খোলা, একটা পাকা ছাউনিওলা বসার জায়গা আছে সেখানে। দারোয়ানকে বলে কমিউনিটি হল থেকে একটা ত্রিপল এনে, তিনদিক ঘিরে দিয়ে তাকেই একটা বেশ সুন্দর ঘরের মতো বানিয়ে নিয়েছিলেন!। ওখানে একটা রিচার্জেবল হ্যাজাকের বন্দোবস্তও করেছেন তিনি।
এরই মধ্যে আবার অয়ন পা দিয়েছে একটা সাপের গায়ে! তাতেই এত ভীত হয়ে পড়ল যে, দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া ভুলে সে ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগল ভয়ে—সাপটার গায় সে পা দিয়েছে, সুতরাং এবার তার ছোবল খাওয়ার পালা। বাকিরা সবাই তাকে দূর থেকে ডাকতে থাকে ওখান থেকে চলে আসার জন্য, কিন্তু সে কিছুতেই সেখান থেকে নড়তে পারছিল না যেন। অবশেষে শিশিরবাবু একটা লাঠি আর টর্চ নিয়ে দারোয়ানকে সঙ্গে করে দৌড়ে গেলেন তার কাছে।
সাপটা তখনও অয়নকে কামড়ায়নি, এমনকি সে তার নিজের জায়গা থেকে একবিন্দুও সরে যায়নি, ফণাও তোলেনি। শিশিরবাবু তার কাছে গিয়ে সাপটার ওপর টর্চের আলো ফেলতেই দেখেন সেটা একটা হলুদ রংয়ের পলিথিনের দড়ি। অয়ন তখনও ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, এই বুঝি সাপটা কামড়াল তাকে।
শিশিরবাবু তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, “দাদুভাই, একটা বড়ো ধোঁকা হয়ে গেছে তোমার সঙ্গে। ওটা সাপ নয়, একটা দড়ি। চোখ খোলো, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া আমাদের এই সোসাইটির মাঠ সবসময় আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি, এখানে তো সাপখোপ আসার কথাও নয়। চলো, আসরে আজ তোমার এই ঘটনাকে নিয়েই গল্প বলব একটা।”
অয়ন চোখ খুলে দেখে সত্যিই ওটা সাপ নয়, একটা দড়ি। তারপর একটু দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, একটু লজ্জা আর একটু খুশি নিয়ে হাসিমুখে দাদুর সঙ্গে সোসাইটির গেটের দিকে এগিয়ে গেল। গেটের কাছে এসে শিশিরবাবুর সেই আসর তৈরি হয়েই আছে দেখে সবাই খুব খুশি হয়ে হইহই করে এসে ঢুকল সেখানে। দারোয়ান-আঙ্কল ঠিক একটা শতরঞ্চি পেতে, খাওয়ার জল আনিয়ে রেখেছেন সেখানে। আর? একটা খবরের কাগজে মোড়া ঝুড়িতে রাখা ছিল গরম গরম বেগুনি আর জিলিপি।
শিশিরবাবু বললেন, “দাদুভাইরা, ধীরেসুস্থে একটা একটা করে তুলে নাও সবাই। দারোয়ান-আঙ্কল এগুলো সব আনিয়েছেন তোমাদের জন্য, সুতরাং তাঁকেও অবশ্যই একটা ভাগ দিয়ে এসো।”
মেঘা একটা জিলিপি কামড়াতে কামড়াতে বলে, “ওঁকে তো প্রথমেই দিয়ে এসেছি দাদু, আর তোমাকে সবার শেষে।”
তার কথা শেষ হতে না হতেই মিঠু বলল, “ও দাদু, অয়নকে তখন বলছিলে না ওর ঘটনা নিয়ে গল্প বলবে আজ! তুমিও দড়ি দেখে কখনও সাপ ভেবে ওর মতন ভয় পেয়েছিলে নাকি?”
“হাঃ হাঃ, না দড়ি দেখে নয়, একটা কাপড় দেখে। একটা সাদা কাপড় আমাকে এক রাতে এত ভয় পাইয়েছিল যে আমাকে প্রায় আড়াই ক্রোশ পথ অতিরিক্ত হাঁটতে হয়েছিল। এক ক্রোশ মানে কতটা পথ বলো দেখি?”
মনামি জিজ্ঞেস করল, “আমি বলব দাদু? তিন কিলোমিটার প্রায়, না? রাতের বেলা আড়াই ক্রোশ মানে, প্রায় সাড়ে সাত থেকে আট কিলোমিটার রাস্তা অতিরিক্ত হাঁটিয়েছিল তোমাকে?”
মিঠাই বলল, “ও দাদু, আবার একটা ভূত দেখার গল্প বলবে মনে হচ্ছে তুমি। তাই না? কেউ সাদা কাপড় পরে রাতের বেলা হাঁটছিল দেখে ভয় পেয়েছিলে, না?”
শিশিরবাবু উত্তর দিলেন, “না না, কেউ কোথাও কাপড় পরে দাঁড়িয়ে ভয় পাওয়ায়নি। রজ্জুতে সর্পভ্রম বলে একটা বাগধারা আছে, পরে পড়বে তোমরা। এর অর্থ হল রজ্জু মানে দড়িকে দেখে সর্প অর্থাৎ সাপ ভেবে ভুল করে ফেলা। আজ যেমন অয়ন ভয় পেয়েছিল, সেই রাতে আমিও অমূলক ভয় পেয়েছিলাম। অবশ্য সকাল হতেই আমার ভুল ভেঙেও যায়।”
তিতাস বায়না ধরল, “ও দাদা, এমনি করে না, বেশ গুছিয়ে বলো না ঘটনাটা। আমিও তো শুনিনি এই কাহিনিটা, তাই না?”
“হ্যাঁ দিদি, আমি তো এটা তোমাকে বলিনি আগে। তো সেই ঘটনাটার কথা শুনবে নাকি তোমরা?”
সকলে হইহই করে উঠল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, দাদু। বলো বলো।”
শিশিরবাবু বললেন, “তোমরা বেগুনি খেয়েছ, জিলিপি খেয়েছ অনেকক্ষণ হল। এখন হাত ধুয়ে জল খেয়ে নাও সবাই, তারপর গল্প শুরু করব।”
সবাই তো হাত-মুখ ধুয়ে, জল খেয়ে চটপট এসে, নিজের নিজের জায়গায় বসে পড়ল দাদুর কাছে গল্প শোনার জন্য।
শিশিরবাবু শুরু করলেন—“এই ঘটনা যখন ঘটে আমি তখন কলেজে পড়ি। বাড়ি এসেছিলাম ছুটিতে। স্বাধীনতার বিশ-ত্রিশ সাল পরেও আমাদের গ্রামের দিকের রাস্তাঘাট, পরিবেশ, সমাজ, সংস্কার এসব বিশেষ কিছুই বদলায়নি তখনও, জানো? আজকাল তো আমাদের এক-একটা গ্রামেরই লোকসংখ্যা তিন-চার হাজারের কম নয়। সেই সময় তিন-চারটে গ্রামের লোকসংখ্যা মিলেও হাজার খানেক হত না।
“যাই হোক, লোকসংখ্যা কম হওয়ায় ফাঁকা জায়গা, বন-বাদাড়, প্রাচীন ভাঙা বাড়ি এসবের আকছারই দেখা মিলত। তখন শুধু আমরা নই, খুব আনন্দে ছিলেন তেনারাও। সত্যি-মিথ্যের আড়ালে দিব্যি আমাদের গল্প-গাথায় তেনাদের অবাধ আনাগোনা ছিল। কতকিছুই না তখন শুনছি তেনাদের কর্মকাণ্ড—তার কতক সত্যি, কতক বানানো, কিন্তু সেসব নিয়ে বিচার করা ছেড়ে ভয় পেতে ভারি মজা লাগত সবার।
“আমার বাবা ছিলেন ভীষণ সাহসী মানুষ, মাও তেমনই। তো তাঁদের দুজনের স্বভাব ও আশীর্বাদে আমিও একটু স্বাভাবিক সাহসী এবং নির্ভীক মানুষ হিসাবেই বড়ো হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু সাহসী মানুষেরও নির্জনতায়, নিরিবিলি একাকিত্বে মন দুর্বল হয়। অমূলক বিষয়ের চিন্তাও এসে মাথায় ভর করে তাকে ভীত, বিচলিত করে দিতে পারে। এই ঘটনাটা শুনলেই সেটা বুঝতে পারবে।
“একবার এক গ্রীষ্মের রাতে পাশের গ্রামে নিমন্ত্রণ রক্ষায় গিয়েছিলাম বন্ধুর বাড়ি। তাদের গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর পুজো উপলক্ষ্যে। গ্রামের দিকে এখনও গেলে প্রতি গ্রামেই কোনও না কোনও ওইরকম অধিষ্ঠাত্রী দেবীর থান, সেখানে পুজো, নিত্যসেবা হতে আজও দেখতে পাবে।
“যাই হোক, গরমের দিন, সন্ধেয় খুব একপশলা ঝড়বৃষ্টিও হয়ে গেল—বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের কালবৈশাখী ঝড়জল যেমন হয় আর কি! তাই একটু রাত করেই খাওয়াদাওয়া করলাম সবাই। তারপর আরও কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে উঠে পড়লাম বাড়ি ফিরব বলে। বন্ধু যদিও বলল, ‘এত রাতে আর বাড়ি যেতে হবে না, থেকে যা। শ্মশানের ধার দিয়ে আবার যাবি, তার চেয়ে কাল সকালেই বরং যাস।’ কিন্তু আমিই বললাম, ‘ধুর, পাশের গ্রামে এসে আবার বাড়ি না ফিরে রাত কাটাব কী? তার ওপর যা ভরপেট খাওয়াদাওয়া হয়েছে, একটু ভালো মতন পায়চারি না করলে হজমও হবে না। আর বাড়ি গিয়ে ল-ম-বা ঘুমও দিতে পারব। তাই বেরিয়ে পড়লাম সেই রাতদুপুরেই। আকাশ তখন একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। জ্যোৎস্নায় চারদিক একবারে দিনের আলোর মতো ঝকঝকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি গুনগুন করে একটা নিধুবাবুর টপ্পা ভাঁজতে ভাঁজতে দিব্যি আলপথ ধরে হাঁটা দিয়েছি বাড়ির দিকে। রাস্তায় পড়ে একটা সরু গ্রাম্য নদী—ওই একটা খাল বললেও চলে, তবে কিনা কলকাতার লোক যেসব খাল দেখে অভ্যস্ত, তার দ্বিগুণ চওড়া ছিল সেটা। শ্মশানটা ছিল তারই পাশে।
“আমি প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি, এমন সময় খুব জোড়ে হুক্কা-হুয়া করে ডেকে একটা শেয়াল দৌড়ে শ্মশানের দিকে চলে গেল আমার সামনে দিয়ে। তার গতিপথ অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখি দূরে একজন মহিলা, আপাদমস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা, দাঁড়িয়ে আছে! উচ্চতা কিছু না হলেও ফুট পঁচিশেক তো হবেই। দুটো হাত ছড়ানো দু-পাশে। হাত নেড়ে নেড়ে আমায় তার দিকে ডাকছে ইশারা করে। চাঁদের আলো পড়ছে তার পিঠে, তাই কিছুতেই মুখটা দেখা যাচ্ছে না। আমার উচ্চতা তার থেকে অনেক কম বলেই হয়তো আমার দিকে বেশ একটু ঝুঁকেই দাঁড়িয়ে ছিল সে। আমি অবাক হলাম, বিচলিতও হলাম। সর্বোপরি মাঝরাতে ফাঁকা মাঠে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা, আর একটা পেত্নী আমায় ধরতে চাইছে—এটা অনুধাবন করে ভীষণভাবেই ভীতও হয়ে পড়লাম। মনে হল, বন্ধুর কথা শুনে আজকের রাতটা ওর বাড়িতে থেকে গেলেই ভালো হত। কিন্তু এখন কী করা যায়? আশেপাশের এক-দেড় ক্রোশ দূর পর্যন্ত কোথাও কোনও জন মানবের টিকিটিও দেখা যাবে না, তাও আবার এই মাঝরাতে তো কোনও কথাই নেই! অগত্যা আর সাতপাঁচ না ভেবে কোমরের কাপড়টা ভালো করে পেঁচিয়ে উলটোদিকে ফিরে টেনে দৌড় দিলাম।
“এক মাইল প্রায় দৌড়ানোর পর দেখলাম আমায় কেউ পিছু ধাওয়া করছে না। তাই আলপথের শর্টকাট রাস্তা ছেড়ে ঘুরে সড়কপথে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত তিন প্রহর পেরিয়ে গেল। সকাল হতে আর অল্পই দেরি ছিল। চাঁদের আলো তখন ফিকে হয়ে গিয়েছিল, শুকতারাও প্রায় নিভু নিভু।
“বাড়িতে ঢুকেই ইঁদারা থেকে জল তুলে ভালো করে হাত-মুখ ধুলাম। ঢকঢক করে এক ঘটি জল খেয়ে তবে যেন বুকে বল পেলাম, তারপর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছে না কিছুতেই, মনে তখন একটাই চিন্তা—পেত্নীটা আমায় ডাকছিল কেন? আর ডাকছিলই যদি, তো আমার পিছু ধাওয়া না করে ছেড়েই-বা দিল কেন?
“সকাল হয়ে এল প্রায়। দেখলাম মা উঠে পড়েছেন, উঠোন ঝাঁট দিচ্ছেন। বাবাও দেখি উঠে গোয়ালে গেলেন গোরু-বাছুরগুলোকে গোয়ালের চালায় বের করে আনতে। জমিতে চাষের কাজ করতে, তখন ওই গরমের দিনে, লোকে সকাল সকালই বেরিয়ে যেত—তারাও এক এক করে বেরোচ্ছে দেখলাম। আমার চোখে তখনও ঘুম নেই, আগের রাতের ঘটনাটার পিছনে রহস্যটা কী সেটা না বুঝতে পারায় মাথাটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। ঠিক করলাম, কাউকে কিছু বলার আগে নিজেই গিয়ে একবার দেখে আসি কী চলছে সেখানে।
“তো চুপচাপ উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বাবা-মা দুজনেই আমায় এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ‘কী রে, এই তো একটু আগে ফিরলি, এখনই আবার কোথায় যাচ্ছিস?’
“আমি আসল কথাটা লজ্জায় বলতে না পেরে বললাম, ‘পেটটা একটু ব্যথা ব্যথা করছে, দেখি একবার মাঠ দিয়ে ঘুরে আসি।’ বলেই চটপট বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
“সোজা দ্রুত পায়ে হেঁটে নদীর ধারে সেই শ্মশানের কাছে গেলাম। নিজের চোখে দিনের আলোয় সেই পেত্নীটাকে ভালো করে দেখলাম। তারপর নিজের গালে নিজেই দুটো কষিয়ে থাপ্পড় মেরে, নিজের কৃতকর্মে নিজেই লজ্জিত হয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।”
মিঠাই জিজ্ঞেস করল, “তুমি দিনের বেলাতেও পেত্নীটাকে দেখতে পেলে দাদু? তাহলে আবার নিজের গালেই চড় মারলে কেন?”
শিশিরবাবু হেসে বললেন, “বলছি দাদুভাই, সেই কথাই বলছি। আমি বাড়ি ফিরতেই বাবা বেশ কৌতুকভরে আমার পানে চাইলেন। বোধহয় তিনি আন্দাজ করে ফেলেছিলেন যে আমার সঙ্গে কী গড়বড় হয়ে থাকতে পারে। তাই বললেন, ‘কী রে, কাল রাতে ভয় পেয়েছিলি নাকি কিছু দেখে?’
“আমি অবাক চোখে তাঁর দিকে তাকাতেই বাবা আবার বললেন, ‘না-হলে পাশের গাঁ থেকে কাল অমন রাত ভোর করে বাড়ি ফিরতিস না, আর সকাল হতে না হতেই শ্মশানের দিকেও দৌড়াতিস না। তুই না বললে কী হবে, আমি তো তোর বাবা রে।’
“আমি তাঁর কথা শুনে হেসে আগের রাতের আমার অভিজ্ঞতার কথা সব খুলে বললাম তাঁকে। বাবা সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তা কী দেখলি আজ ওখানে গিয়ে? কী ছিল ওখানে?’
“আমি লজ্জায় মুখ নীচু করে বললাম, ‘ঝড়ে কোথাও থেকে উড়ে এসে খেজুর গাছে জড়িয়ে গিয়েছিল একটা সাদা থান। হাওয়ায় তার পাতা নড়ছিল যখন, তখন মনে হচ্ছিল বুঝি মাথা ঝুঁকিয়ে হাত দুটো দু-দিকে ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে সে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কাছে ডাকছে আমায়। আর তার ওপর গাছে জড়িয়ে যাওয়া শাড়ির জন্য খোলা মাঠের হাওয়া লেগে ওই খেজুরপাতায় সাঁই সাঁই করে যে আওয়াজ হচ্ছিল সেটাই আমার কানে আয় আয় বলে শুনিয়েছিল সেই রাতের বেলা।’
“বাবা আর আমি দুজনেই তারপর আসল ঘটনাটা বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে উঠলাম, যেমন এই তোমরাও হাসছ এখন। যাই হোক, চলো এবার নিজের নিজের ঘরে যাই। ওসব ভূত বলে কিছু নেই, আমাদের মনের ভ্রম থেকেই এর উৎপত্তি আর ভ্রম ভাঙলেই তার নাশ। বুঝেছ? চলো চলো সবাই, ঘরে গিয়ে এবার পড়তে বসতে হবে।”
সকলে মিলে সেখান থেকে বেরিয়ে হইহই করে দাদুকে ঘিরে সোসাইটির ভিতরের দিকে হাঁটা দেয়। আর তাদের দারোয়ান-আঙ্কল এগিয়ে এসে ত্রিপল খুলে জায়গাটা খালি করে সাফসাফাই করতে থাকেন।