Toyঢাক-সহজ গল্প- সহজ গল্প-জিকো ও মিকির খেলাধূলা-সুস্মিতা কুণ্ডু -শীত ২০২১

আগের সহজ গল্প- পুঁচকে গাছের কথা, লালু নীলু আর ভুলু

toydhaksusmita

সেদিন হয়েছে কী, জিকো আপনমনে বেড়াতে বেড়াতে গিয়ে হাজির হয়েছে বাবলাগড়ের বনে। নাম শুনেই বুঝতে পারছ বাবলাগড়ের বনে বট-অশ্বত্থ-তাল-সুপুরিগাছ মোটেই নেই। ডাইনে-বাঁয়ে, সামনে-পিছে যেদিকে চাও শুধু বাবলাগাছ। সারে সারে কাঁটাওয়ালা উঁচু উঁচু বাবলাগাছ। বাবলাবন দেখে হাতি-ঘোড়া-বাইসন-হরিণ হলে মুখ ফিরিয়ে চলে আসত হয়তো, তবে জিকোর তো শাপে বর হল। ও মা, জানো না বুঝি কেন! জিকো হল গিয়ে একটা জিরাফ। আর জিরাফরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে কচি কচি বাবলাপাতা খেতে।

ভাবছ বুঝি ওই বড়ো বড়ো কাঁটা সামলে ওই উঁচু গাছের ডাল থেকে পাতাগুলো কী করে খায় জিরাফরা? এমনি এমনি কি আর ওদের অমন উঁচু গলা? সরু সরু পা হলে কী হবে, সেই পায়ে ভর দিয়ে গলা তুলে যখন দাঁড়ায় জিকো জিরাফ, তখন বনের হাতি-ঘোড়ারাও জিকোকে দেখে মনে মনে সেলাম ঠোকে। আর জিকোর জিভটা তো আর তোমার আমার মতো ছোটোখাটো নয়। ইয়াবড়ো জিভটা দিয়ে বাবলা-ডালের কাঁটার ফাঁক গলিয়ে ঠিক পাতাগুলো টেনে নিয়ে কচমচিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।

জিকোও তেমনি সবচে’ উঁচু বাবলাগাছটার টঙে গলা বাড়িয়ে কাঁটা বেছে পাতা পেড়ে মুখে পুরছিল। মনের সুখে এ-ডাল ও-ডালে পাতা খেতে খেতে কখন যেন নিজের ইয়াবড়ো সরু গলাটাকে একটা ডালের খাঁজে আটকে ফেলল। এইসান আটকে গেল, না ডাইনে নড়ে, না বাঁয়ে। না ওপরে তুলতে পারে, না নীচে নামাতে পারে গলা। সে কী করুণ দশা। জিকো বাবলাপাতা চেবানো ভুলে হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় করতে শুরু করল। চোখ দিয়ে টপটপ করে জলের ফোঁটা পড়তে লাগল। এত ছটপটানি আর নড়াচড়ার ফলে জিকোর ইয়া উঁচু হলুদ গলায় কমলা বাদামি ছোপের সঙ্গে গোটা কতক লাল ছোপও পড়েছে কেটেকুটে গিয়ে।

অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। ওইভাবে গলা আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে জিকোর সরু সরু পাগুলো বেশ টনটন করতে শুরু করল। জীবনটা বুঝি বেঘোরে এখানেই শেষ হবে না খেয়েদেয়ে, ভাবছিল জিকো। এমন সময় কে যেন জিকোর লেজ ধরে টানল। এই এমন সময় কে লেজ ধরে টানে রে বাপু! এতটুকু কি মায়াদয়া নেই মনে? জিকোর রাগই হয় বেশ। তারপর লেজ ধরে যে টানছিল সে ওখানেই না থেমে জিকোর পিঠ বেয়ে গলা বেয়ে উঠতে থাকে। জিকোর এবার একটু ভয়ই লাগতে শুরু করে। বলা নেই কওয়া নেই, এরকম ঘাড়ে চেপে পড়ল এসে! একে জিকো এরকম বেকায়দায় ফেঁসে আছে, তার ওপর এই বিপদ!

এমন সময় জিকোর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কে যেন বললে, “এই, কী হয়েছে তোমার? এমন বাবলাগাছে গলা দিয়ে দাঁইড়ে রয়েছ কেন শুনি খামোকা? কী হাঁদা রে বাবা, বলি কাঁটা বিঁধবে যে!”

গলাটা শুনে জিকো একটু হাঁফ ছাড়ল। খুব একটা বাজে কেউ বলে তো মনে হল না কথা শুনে। মজা করেই কথা কয়, তবে একটু আবার রাগও ধরে কথা শুনে। জিকো কি আর সাধ করে বাবলাগাছে গলা দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারাদিন!

রেগেমেগে সেইটেই চেঁচিয়ে বললে জিকো, “বলি, চোখের মাথা খেয়েছ নাকি? এই দেখো না! আমার গলাটা গাছের ডালের খাঁজে ফেঁসে গেছে, তাই তো আটকে রয়েছি সেই সকাল থেকে। তুমি আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিও না তো বাপু! যেই হও সেই হও, বিদেয় হও।”

এবার যে কথা কইছিল সে সামনে এল। জিকোর গলাটা যে-ডালে আটকেছে সেই ডালটাতেই বসল। ও বাবা! এ তো একটা বাঁদরছানা! বাদামি রঙের ইয়াবড়ো লেজওয়ালা বাঁদরছানা। ওই দেখো না কেমন ফিচফিচিয়ে দাঁত বার করে হাসছে। হাসে, নাকি দাঁত খিঁচোয় বোঝা দায়!

জিকো কিছু বলার আগেই সে বলল, “অ! তাই বলি! সাধ করে গাছে গলা দিয়ে কে আর কাঁটার খোঁচা খাবে! কই দেখি, না নড়ে চুপটি করে দাঁড়াও তো। ধীরে ধীরে আশেপাশের ডালগুলো ভেঙে তোমার গলাটা বার করি।”

জিকো শুরুতে বুঝতেই পারছিল না বাঁদরটার কী মতলব। এখন কথা শুনে বুঝল আসলে ওর উপকারই করতে চায়। জিকো তাই চুপটি করে যেমন বলল তেমনই দাঁড়াল। বাঁদরটা নরম হাতে আগে ডালের কাঁটাগুলো ভেঙে সরিয়ে দুই হাতে করে ডালটা ফাঁকা করে বলল, “ঝটপট মাথাটা নীচের দিকে গলিয়ে নাও এবার।”

জিকো মাথাটা গলিয়ে বার করে নিয়ে একটা বড়ো করে দম নিল। উফ্‌, হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সেই কখন থেকে আটকে থেকে ঘাড়-গলা টনটনিয়ে গেল।

বাঁদরছানাটা এসে আলতো করে ঘাড়টায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর কী একটা পাতা চিবিয়ে কেটে-ছড়ে যাওয়া জায়গাগুলোয় লাগিয়ে দিল। ফুঁও দিয়ে দিল বেশটি করে।

জিকো গলাটা মোলায়েম করে শুধল, “হ্যাঁ গো, তোমার নামটা তো বললে না। এত উপকার করলে আমার। নইলে এই বিপদে যে বেঘোরে জীবনটাই যেত আমার।”

বাঁদরছানাটা জিকোর উঁচু ঘাড়ের ওপর থেকে সড়াৎ করে লেজ বেয়ে নেমে এসে বলে, “আমি হলুম মিকি। বনের পশুদের বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই তো উচিত। এ আর বড়ো কথা কী! তোমার নামটা তো কই বললে না! তোমার ঘাড় বেয়ে বেশ গড়ান গড়ান খেলা যায়। তুমি কি কিছু মনে করবে আমি যদি একটু খেলা করি?”

জিকো হো হো করে হেসে বলল, “না না, মনে করব কেন! আমার নাম জিকো। তুমি আজ থেকে আমার খেলার সাথী হলে, কেমন?”

তারপর…

তারপর মিকি আর জিকো দুইজনায় মিলে ঢের ঢের মজা করল। সে-সব আরেকদিন শোনাব’খন।

খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s