পিয়ালি গাঙ্গুলীর আগের লেখা– ফোচনের কীর্তি , ফোচনের আরেক কীর্তি মিঠে প্রতিশোধ , বেলুন দাদু , দুটি অণুগল্প , নতুন বছর , বাঘমামার বিয়ে, মাম্বোর শুঁড় , জঙ্গলের নতুন নিয়ম , টুংটাং, লেজ নিয়ে, জুনিয়র পাণ্ডব গোয়েন্দা
“কাম অন, হারি আপ গার্লস!”
ওয়ার্ডেন মিস ভায়োলেট ডাক দিলেন। সপ্তাহে একদিন ওদের হোস্টেলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। টুকিটাকি শপিং আর একটু খাওয়াদাওয়া করে বিকেল থাকতে থাকতে আবার স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে যাওয়া। দেরি হয়ে গেলে অনেক সময় পাইনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শর্টকাট নেওয়া হয়। আজকেও তাই হয়েছে। রিমঝিম আর ওর বেস্ট ফ্রেন্ড তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছিল। হঠাৎ রিমঝিম কিছুতে একটা হোঁচট খেয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে লক্ষ করে দেখল একটা লাল টুকটুকে ছাতা। এই জঙ্গলের মধ্যে কার ছাতা পড়ে আছে? আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না রিমঝিম। ছাতাটা হাতে করে তুলে নিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝল ছাতাটার শিক ভাঙা। আজ অবধি রিমঝিম কোনোদিন অন্যের কোনও জিনিস নেয়নি, কিন্তু আজ কেন জানি ওর ছাতাটাকে ফেলে রেখে যেতে ইচ্ছা করল না। ছাতাটা যেন ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল।
পরের সপ্তাহে বেরিয়ে ছাতাটার ভাঙা শিকটা সারিয়ে নিল রিমঝিম। দুটো জায়গায় সেলাই খুলে গেছিল, সেগুলোও সেলাই করা হয়েছে। এবার ছাতাটা ব্যবহার করা যাবে। পাহাড়ে যা বৃষ্টি হয়, একটা এক্সট্রা ছাতা থাকা ভালো। নিজের ছাতাটা হঠাৎ যদি কোনও কারণে অকেজো হয়ে যায়!
বাইরে ঘুরে এসে রিমঝিমের মনটা সেদিন ভালোই ছিল। সন্ধেবেলায় মা-বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে অনেকক্ষণ কথাও হয়েছে। রাতে শোওয়ার সময় একটা এনিড ব্লাইটন পড়তে পড়তে হাতে বই ধরা অবস্থাতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। বেড-সাইড ল্যাম্পটাও নেভানো হয়নি। কারও একটা গলার আওয়াজে ঘুম ভাঙল রিমঝিমের। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখল, সেই লাল ছাতাটার হাত-পা গজিয়েছে। সে দিব্যি নাচছে। চোখ কচলে রিমঝিম ভালো করে তাকিয়ে দেখল। না, ও মোটেই স্বপ্ন দেখছে না। ধড়মড় করে উঠে বসল রিমঝিম। বসতেই ছাতাটা এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে ওর হাত ধরে বলল, “থ্যাংক ইউ রিমঝিম আমাকে সারানোর জন্য।”
“ছাতা হাঁটতে চলতে পারে, কথা বলতে পারে—আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“আমি যে-সে ছাতা নই, আমি ম্যাজিক ছাতা। আমি উড়তে পারি।” এই বলেই সে উড়ে গিয়ে প্রায় সিলিংয়ে ঠেকে গেল। তারপরেই উড়ে এসে একবারে রিমঝিমের হাতের মুঠোয়।
জয়ঢাকি গল্প-উপন্যাসের লাইব্রেরি এইখানে