নিলামের গল্প (পর্ব ১), পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫
অপেক্ষক বা map বড় মজার জিনিস, domain আর co-domain-এর মধ্যে সম্পর্ক কেমন তা দিয়ে নানান রকম map পাওয়া যেতে পারে। আমরা এর মধ্যেই দেখেছি যে domain-এ কিছু সদস্য থাকে আর co-domain-এও কিছু সদস্য থাকে, এই সদস্যরা আলাদাও হতে পারে আবার একও হতে পারে – যেমন ধর domain-এ ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যারা রয়েছে, আর co-domain-এও সেই একই সংখ্যারা রয়েছে; অন্যদিকে আবার এমনও হতে পারে যে domain-এর সংখ্যারা আগের মতোই ১ থেকে ১০, কিন্তু co-domain-এর সংখ্যারা হল ১, ৪, ৯, ১৬, ২৫, ৩৬, ৪৯, ৬৪, ৮১, ১০০; এই প্রথম ক্ষেত্রে যদি আমরা domain-এর সঙ্গে co-domain-এর সম্পর্ক কেমন বুঝতে চাই তাহলে সোজাসুজি দেখতে পাচ্ছি যে codomain-এর সংখ্যারা domain-এর সংখ্যাদের সঙ্গে সমান, অর্থাৎ এক্ষেত্রে co-domain-এ domain-এর সংখ্যাদের সমান প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়েছে। এই map-টা চিত্র-১-এ দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে co-domain-এর সদস্যরা domain-এর সদস্যদের বর্গ সংখ্যা, সুতরাং এই ক্ষেত্রে co-domain-এ domain-এর সংখ্যাদের বর্গ প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে চিত্র-২-এ।
এবার মনে কর ব্যাপারটা এমনও তো হতে পারে যে domain-এর সংখ্যারা ১ থেকে ১০, কিন্তু co-domain-এ আগের সংখ্যাগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত একটা বা তার বেশি সংখ্যা রয়েছে যারা domain-এর সংখ্যাগুলোর কারুর বর্গ নয় (চিত্র-৩),
এমনকি হয়তো আদৌ বর্গসংখ্যাই নয় – তাহলে? এখন কি আর domain আর co-domain-এর মধ্যে কোনও map থাকছে না? এ তো গেল একটা প্রশ্ন। প্রশ্নটা আরেক দিক থেকেও হতে পারে – মনে কর domain-এর সংখ্যাগুলো ১, -১, ২, -২ , ৩, -৩ , ৪, -৪, ৫, -৫ আর co-domain-এর সংখ্যাগুলো ১, ৪, ৯, ১৬, ২৫ – তাহলে domain আর co-domain-এর সংখ্যাগুলোর মধ্যে কি কোনও সম্পর্ক আমরা দেখতে পাচ্ছি (চিত্র -৪)?
তোমরা তক্ষুণি বলবে এ আবার একটা প্রশ্ন হল? সম্পর্ক তো আছেই, শুধু তাই নয়, খুব সহজ সম্পর্ক – co-domain-এর প্রত্যেক সংখ্যা domain-এর কোন না কোনও সংখ্যার বর্গ। ঠিক কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে চিত্র-২-তে যে map-টার কথা আমরা বলেছিলাম, তার থেকে পার্থক্য হল কোথায়? সেখানেও তো co-domain-এর সংখ্যারা domain-এর সংখ্যাদের বর্গ সংখ্যা ছিল! তাহলে? দেখ পার্থক্যটা এখানেই হয়ে যাচ্ছে যে চিত্র-২-এর ক্ষেত্রে domain-এ যে’কটা সংখ্যা ছিল co-domain-এ তার সমান সংখ্যক প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়েছে। কিন্তু চিত্র-৪-এর ক্ষেত্রে domain-এ যতগুলো সংখ্যা, co-domain-এ প্রতিচ্ছবির সংখ্যা তার চেয়ে কম, সঠিকভাবে বললে ঠিক অর্ধেক।
আসলে এই চিত্র-১ থেকে চিত্র -৪ অবধি দেখানো সবগুলো ঘটনাই এক একটা map, তবে এদের ধরণ ধারণ পরস্পরের থেকে আলাদা বলে এদের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়েছে। চিত্র-১ আর চিত্র-২ এর ব্যাপারটা একই ধরণের, মানে domain-এ যতজন সদস্য, co-domain-এও তাই এবং এদের মধ্যে সম্পর্ক এমন যে কেউ পড়ে নেই, co-domain-এর প্রত্যেক সদস্যেরই একজন করে pre-image আছে এবং domain-এর প্রত্যেক সদস্যের একটা করে প্রতিচ্ছবি আছে। এই ধরণের map -কে বলে one-one onto map – one-one কারণ domain-এর একটা সদস্যর সঙ্গে co-domain-এর একটাই মাত্র সদস্যের সম্পর্ক রয়েছে, আর যখন co-domain-এ এমন কোনও সদস্য পড়ে থাকে না যার domain-এ কোনও pre-image নেই তখন তাকে বলে onto map। অন্যদিকে চিত্র-৩-এ যে map -টা দেখানো হচ্ছে, সেখানে domain -এর প্রত্যেক সদস্যর একটা করে প্রতিচ্ছবি রয়েছে co-domain -এ , আর co-domain -এর কোনও সদস্যের একের বেশি pre-image নেই – এটাও one-one map , কিন্তু একে বলা হয় into map অর্থাৎ চিত্র-৩ আমাদের one-one into map দিচ্ছে। অন্যদিকে চিত্র-৪-এ আমরা দেখছি যে co-domain -এর সমস্ত সদস্যর pre-image রয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকেরই দুটো করে pre-image রয়েছে, সুতরাং এই map -টাকে বলা হচ্ছে many-one map; আর যেহেতু co-domain -এ এমন কেউ পড়ে নেই যার domain – এ pre-image নেই, তাই একে বলা হচ্ছে many-one onto মাপ । তাহলে যে সম্ভাবনাটার কথা বাকি রয়ে গেছে সেটা আমরা দেখছি চিত্র-৫-এ – এটা চিত্র-৪-এর সামান্য পরিবর্তিত রূপ, এখানে অতিরিক্ত দুটি সদস্য ঢুকেছে, ৫ আর ৭, এদের দুজনের কোনও pre-image নেই domain -এ। এই ধরণের map -এর নাম হল many-one into map।
এখন প্রশ্ন হল, নিলামের গল্প শুনতে শুনতে এসব map -এর ধরণ ধারণ নিয়ে হঠাৎ এত ব্যাখ্যান শুরু হল কেন? মনে করে দেখ, আগেই বলা হয়েছিল, নিলামে দরদাতারা যে দর হাঁকে তা হল তাদের মূল্যায়নের অপেক্ষক। কোন ধরণের অপেক্ষক সেটা বোঝাতেই এত গল্প। নিলামে তোলা বস্তু সম্পর্কে দরদাতাদের মূল্যায়ন, অর্থাৎ সর্বোচ্চ যত মূল্য দিতে তাঁরা প্রস্তুত, তার সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের হাঁকা দরের সম্পর্ক হল one-one onto map গোত্রের, আর সেই জন্যই এই সব ক্ষেত্রে দরদাতাদের দর দেখে তাঁদের মূল্যায়ন সম্পর্কে ধারণা করা যায়, সেইভাবে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন কোন দরদাতার সেটাও বোঝা যায় আর সেই জন্য সর্বোচ্চ মূল্যায়ন যে ক্রেতার তার হাতেই বস্তুটা নির্বিঘ্নে তুলে দেওয়া যায়।
এই one-one onto map-গুলোর একটা বিরাট সুবিধে আছে, একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলেই সেই সুবিধেটা বুঝতে পারবে। আবার মনে কর সেই A আর B সেট দুটোর কথা – সেট A-এর সদস্যরা হল ১,২,৩,৪,৫ আর সেট B-এর সদস্যরা হল ২,৪,৬,৮,১০। স্পষ্টতই সেট B-এর সদস্যরা সেট A-এর কোন না কোনও সদস্যের দ্বিগুণ সংখ্যা; আবার একই ভাবে সেট A-এর সংখ্যারা হল সেট B-এর কোন না কোনও সংখ্যার অর্ধেক। সুতরাং A আর B-এর মধ্যে সম্পর্ক দেখাতে আমরা A থেকে B-এর দিকে আর B থেকে A-এর দিকে, দু’ভাবেই যেতে পারি, কারণ A-কে domain ধরলে co-domain B-তে তার প্রত্যেক সদস্যের কেবলমাত্র একটি করেই প্রতিচ্ছবি বর্তমান, আবার B-কে domain ধরলে একই ভাবে co-domain A-তে তার প্রত্যেক সদস্যের মাত্র একটি করেই প্রতিচ্ছবি রয়েছে। সুতরাং map দুদিক থেকেই হওয়া সম্ভব, তবে দুই রকম ভাবে হচ্ছে, একবার দ্বিগুণ, আরেকবার অর্ধেক। এটা তো একটা বিশেষ উদাহরণ ছিল, এর বাইরেও অসংখ্য ধরণের one-one onto map থাকতে পারে, তাদের ক্ষেত্রেও এরকমই দুমুখো সম্পর্ক কিন্তু থাকবে। এই দুমুখো সম্পর্কের একটাকে ধরা যাক নামে ডাকা হচ্ছে, তাহলে উল্টোদিকের সম্পর্কটাকে ডাকা হবে নামে। আমাদের এই উদাহরণের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ যদি হয় তাহলে অর্ধেক হবে , আর অর্ধেক যদি হয় তাহলে দ্বিগুণ হবে । এ অনেকটা সেই বাবা আর ছেলের ঘটনার মত – দীপ যদি তোজোর বাবা হয়, আর তোজো দীপের একমাত্র ছেলে হয়, এবং বাবা থেকে ছেলে সম্পর্কটাকে যদি আমরা নামে ডাকি, তাহলে তোজো দীপের ছেলে এই সম্পর্কটাকে আমরা ডাকব নামে। আবার যদি তোজো দীপের ছেলে, এই সম্পর্কটাকে বলি, তাহলে দীপ তোজোর বাবা এই সম্পর্কটার নাম হবে । পোশাকি ভাষায় এই চিহ্ন দিয়ে যে নামটা বোঝানো হয় সেটাকে ডাকা হয় -inverse নামে। (বলো দেখি এমন নাম কেন?) যেকোন অপেক্ষকের inverse তখনই থাকা সম্ভব যখন তার domain আর co-domain-এর মধ্যে one-one onto map থাকে, many-one map হলেও তা সম্ভব নয়, আবার one-one into map হলেও তা সম্ভব নয়। সেই কারণেই চিত্র-৩, চিত্র-৪ বা চিত্র-৫, কারুর ক্ষেত্রেই inverse -এর অস্তিত্ব থাকবে না।
এবার যে প্রশ্নটা উঠে আসছে সেটা হল, নিলামের দর one-one onto map হলে কার কী সুবিধে হচ্ছে? আদৌ লোকে এটা নিয়ে ভাবিত কেন? আসলে যারা নিলাম পরিচালনা করে তাদের তো কিছু কিছু উদ্দেশ্য থাকে – যেমন বিক্রেতারা চায় বেশি দাম পেতে, তবে শুধু বেশি দাম পাওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য না হতে পারে, যখন এমন কিছু নিলাম করা হচ্ছে যার সামাজিক মূল্য খুব বেশি, তখন এমন কারো কাছে সেই বস্তুটি যাওয়া উচিৎ যে সেটার সদ্ব্যবহার সবচেয়ে ভালো উপায়ে, অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি দক্ষতা বা efficiency-এর সঙ্গে করতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় সবচেয়ে বেশি দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তির মূল্যায়ন সবচেয়ে বেশি হয়। তাহলে যার সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন, সেই যদি সর্বোচ্চ দর হেঁকে থাকে তাহলে তাকে চিনে নেওয়া কঠিন কাজ নয় মোটেই। আর সেক্ষেত্রে উচ্চ সামাজিক মূল্য সম্পন্ন যে বস্তুটি নিলাম করা হচ্ছে, সেটিকে সহজেই যোগ্য হাতে সমর্পণ করার পথ একেবারে প্রশস্ত। এই চিনে নেওয়ার রাস্তাটাই হল inverse, ক্রেতাদের হাঁকার দরগুলির inverse নিলেই কেল্লাফতে। তবে এর পেছনে কিন্তু একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুমান রয়েছে, ক্রেতাদের মূল্যায়নের মানগুলোকে মিলিয়ে যদি একটা domain ভাবা হয়, আর দরের মানগুলো মিলিয়ে co-domain, তাহলে domain থেকে co-domain-এ one-one onto map আছে এটা ধরে নেওয়া হয়, তা যদি না হয় তাহলে কিন্তু দর থেকে মূল্যায়নের সঠিক ধারণা কখনই পাওয়া সম্ভব নয়।
বেশ, এই পর্যন্ত না হয় বোঝা গেল, কিন্তু আবার প্রশ্ন, দরদাতাদের জিজ্ঞেস করলে তারা তো সরাসরিই তাদের মূল্যায়ন কত বলে দিতে পারে, তাহলে এত হ্যাপার দরকার কি? আসলে ব্যাপারটা শুনতে সোজা লাগলেও আদতে এত সিধে নয়। দরদাতারা যখন ক্রেতা তখন নিলামে তোলা বস্তুটা বা বস্তুগুলোকে পেতে হলে তাদের তো দাম দিতে হচ্ছে, প্রত্যেক ক্রেতাই চাইবে দাম যতটা সম্ভব কম দিয়ে জিনিসটা বা জিনিসগুলো পেতে। ওদিকে যে বিক্রেতা নিলাম করছে সে তো স্বভাবতই চাইবে যতটা বেশি সম্ভব দাম তুলতে। এবার এই দুটোকে মিলিয়ে একটা নিলাম সুষ্ঠুভাবে করা কি সম্ভব? উত্তর হল, অবশ্যই সম্ভব আর নিলাম তাত্ত্বিকরা এখানেই তাঁদের কৃতিত্ব দেখান। তাঁরা এমনভাবে নিলামের নিয়মকানুন ঠিক করেন যাতে ক্রেতারা নিজেদের স্বার্থেই নিজেদের সত্যিকারের মূল্যায়নের তথ্য দিয়ে দেয়, তা সে সরাসরিই হোক বা পরোক্ষে। ক্রেতাদের এই মূল্যায়নের ব্যাপারটাও কিন্তু খানিক জটিল, তবে বেশ মজাদার। সে গল্পটা অন্য একদিনের জন্য তোলা রইল।
ক্রমশ
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর